ফেসবুক নিউজ ফিডের নতুন অ্যালগরিদম অনুসারে, আপনার কোম্পানির ফেসবুক পেজে যা পোস্ট করছেন, তা আপনার কমিউনিটির একাংশের কাছেই পৌঁছাবে। যেহেতু ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাদের ওয়েবসাইটের মনিটাইজেশন করার জন্য নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করছে, তাই একজন ব্যবসায়ীকে তার ফেসবুক কমিউনিটির কাছে পৌঁছাতে হলে পূর্বের চেয়ে বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে।
ফেসবুক অ্যাডভার্টাইজমেন্ট বর্তমানে প্রত্যেক ব্যবসার মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে। আজকে আমরা আলোচনা করব, ফেসবুক অ্যাডভার্টাইজমেন্টের জন্য একজন ব্যবসায়ীর যেসব বিষয় জানা জরুরি, সে সম্পর্কে।
যেভাবে ফেসবুক অ্যাড তৈরি করবেন
ফেসবুক অ্যাড তৈরি করার জন্য প্রথমেই ফেসবুক অ্যাড প্রচারের উদ্দেশ্য বাছাই করতে হবে। আপনার পণ্য বা সেবার টার্গেট কী হবে সেটার উপর এই উদ্দেশ্য নির্ভর করে। এক্ষেত্রে আপনার অ্যাড প্রচারের উদ্দেশ্য হতে পারে, ওয়েবসাইটে বিক্রি বৃদ্ধি, আপনার তৈরি করা অ্যাপ্লিকেশন বিক্রি বা ডাউনলোড বৃদ্ধি কিংবা পণ্য কেনার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি।
যেভাবে ফেসবুক অ্যাড প্রচারের উদ্দেশ্য বা অবজেক্টিভ বাছাই করবেন
যদি আপনার ব্যবসায় অনেক ধরনের অফার ও ছাড়ের ব্যবস্থা থাকে এবং আপনি সেই অফারগুলো আরো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চান, তাহলে ব্র্যান্ড অ্যাওয়ারনেস, রিচ ও ভিডিও ভিউ ক্যাটাগরিতে অবজেক্টিভ বাছাই করা উচিত।
যদি আপনার ব্র্যান্ড বা ব্যবসা সম্পর্কে মানুষ পূর্বেই অবগত থাকে, কিন্তু আপনি চাইছেন, আপনার ব্যবসায়ের পণ্য কিংবা সেবা সম্পর্কে তারা আরো জানুক, আপনাকে ফলো করুক এবং আপনি কিভাবে সেবা দিচ্ছেন তা সম্পর্কে তারা আরো বেশি সচেতন হোক, তাহলে অ্যাপ ইন্সটল, ওয়েবসাইট ক্লিক ট্র্যাফিক, অ্যাপ অ্যাঙ্গেজমেন্ট ট্র্যাফিক, লিড জেনারেশন, পেইজ পোস্ট অ্যাঙ্গেজমেন্ট, ইভেন্ট রেসপন্স অ্যাঙ্গেজমেন্ট, অফারস অ্যাঙ্গেজমেন্ট, ভিডিও ভিউ এবং মেসেজ ক্যাটাগরিতে অবজেক্টিভ বাছাই করা উচিত।
যদি আপনার ব্যবসায়ে গ্রাহকের সংখ্যা কয়েক হাজারেরও বেশি হয়ে থাকে তাহলে তাদের জন্য পণ্য ক্রয়, সাইন আপ করানো ও যোগাযোগের ব্যবস্থা আরো বেশি সহজবোধ্য করতে, ওয়েবসাইট কনভার্সন, অ্যাপ কনভার্সন, সেলস ক্যাটালগ, স্টোর ভিজিট এবং অফলাইন কনভার্সন ক্যাটাগরিতে অবজেক্টিভ বাছাই করা উচিত।
ফেসবুক অ্যাড অবজেক্টিভ বাছাই করার পর, আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্রাহক বাছাই করতে হবে। তাই বয়স, স্থান, অবস্থা ইত্যাদি ভেদে সঠিক গ্রাহকসংখ্যা বাছাই করুন।
যেভাবে উপযুক্ত ফেসবুক অ্যাড অডিয়েন্স বাছাই করবেন
দুই বিলিয়ন মানুষ প্রতিমাসে ফেসবুক ব্যবহার করছে। ফেসবুকের শক্তিশালী অডিয়েন্স সিলেকশন টুলের মাধ্যমে আপনি ব্যবসার জন্যে টার্গেট করতে পারবেন উপযুক্ত গ্রাহকদের। ফেসবুকে ব্যবসায়ীরা যে তিন ধরনের অডিয়েন্স বাছাই করতে পারবেন, তারা হচ্ছেন, কোর অডিয়েন্স, কাস্টম অডিয়েন্স ও লুকএলাইক অডিয়েন্স।
যেকোনো ধরনের ব্যবসার জন্য ডেমোগ্রাফি, লোকেশন, ইন্টারেস্ট এবং বিহেভিয়ারের উপর ভিত্তি করে আপনি কোর অডিয়েন্স বাছাই করতে পারবেন। কাস্টম অডিয়েন্সের মাধ্যমে আপনি পুরোনো গ্রাহক ও ফোনবুকের গ্রাহকদের সাথে যুক্ত হতে পারবেন। লুকএলাইক অডিয়েন্সের মাধ্যমে আপনার ব্যবসার অগ্রগতি ও অবস্থা উপর ভিত্তি করে একই ক্যাটাগরির অন্য ব্যবসার গ্রাহকদের মধ্য থেকে অডিয়েন্স বাছাই করতে পারবেন।
যেখানে ফেসবুক অ্যাড প্রদর্শন চালু রাখবেন
অবজেক্টিক ও অডিয়েন্স বাছাই করার পর আপনাকে ফেসবুক অ্যাড প্লেসমেন্ট বাছাই করতে হবে। অর্থাৎ আপনার নির্ধারিত অ্যাডটি কোথায় কোথায় প্রদর্শিত হবে, তা বাছাই করতে হবে। ফেসবুকের সাথে ইন্সটাগ্রাম, অডিয়েন্স নেটওয়ার্ক ও মেসেঞ্জারেও আপনার অ্যাডটি প্রদর্শন করতে পারবেন।
৬০ শতাংশের বেশি ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারী তাদের পণ্য ও ব্যবসার জন্য ইন্সটাগ্রাম ব্যবহার করে। ফেসবুক এবং ইন্সটাগ্রাম ছাড়াও অডিয়েন্স নেটওয়ার্ক ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও ফেসবুক অ্যাডভার্টাইজমেন্ট চালু রাখতে পারবেন। মেসেঞ্জারের নতুন অ্যাড অ্যালগরিদমের মাধ্যমে মেসেঞ্জারেও ফেসবুক অ্যাড প্রদর্শন চালু রাখতে পারবেন।
ফেসবুক অ্যাডের জন্য বাজেট তৈরি
বিভিন্ন ধরনের ক্যাটাগরিতে ফেসবুক অ্যাডের জন্যে বাজেট তৈরি করতে পারবেন। যদি আপনার বাজেট কম রাখতে চান, সেক্ষেত্রে ডেইলি বাজেট পছন্দ করতে পারবেন। আর যদি আপনার বাজেট একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য রাখতে চান, সেক্ষেত্রে সাত দিন, পনের দিন ও ত্রিশ দিনের জন্য বাজেট তৈরি করতে পারবেন। যদি বাজেট সংক্রান্ত কোনো ঝামেলায় জড়াতে না চান, তাহলে একইসাথে সারাজীবনের জন্য বাজেট তৈরি করে অ্যাড চালু রাখতে পারবেন।
ফেসবুক অ্যাডের ফরমেট
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু অ্যাড ফরমেট সাপোর্ট করে। যেমন, ভিডিও অ্যাড, ইমেজ অ্যাড, কালেকশন অ্যাড, ক্যারোজেল অ্যাড, স্লাইডশো অ্যাড, ক্যানভাস অ্যাড, লিড জেনারেশন অ্যাড, অফার অ্যাড, পোস্ট অ্যাঙ্গেজমেন্ট অ্যাড, ইভেন্ট রেসপন্স অ্যাড এবং পেইজ লাইক অ্যাড।
ফেসবুক অ্যাড যেভাবে কাজ করে
ফেসবুকে অ্যাডভার্টাইজমেন্ট সচল করার জন্য উপরের নিয়মে অ্যাড তৈরি করার পর ফেসবুক সেই সেটিংস অনুসারেই অ্যাড প্রদর্শন চালু করবে। আপনার সেটিংস যত বেশি সঠিক হবে, ফেসবুক তত বেশি গ্রাহককে আপনার অ্যাডটি পৌঁছে দিতে পারবে।
একটি অ্যাড সচল করার পূর্বে আপনাকে বাছাই করতে হবে যে, আপনি ক্লিক পার কস্টের (সিপিসি) ভিত্তিতে নাকি ক্লিক পার মাইলের (সিপিএম) ভিত্তিতে অর্থ প্রদান করবেন। সিপিসি মানে হচ্ছে, আপনি ততবার আপনার অ্যাডের জন্য অর্থ প্রদান করবেন, যতবার গ্রাহক আপনার অ্যাডে ক্লিক করবে। সিপিএম মানে হচ্ছে, প্রতি ১০০০ গ্রাহক অ্যাডে ক্লিক করার পর আপনি অ্যাডের জন্য অর্থ প্রদান করবেন।
কখন ফেসবুক অ্যাডভার্টাইজমেন্ট ব্যবহার করা উচিত
পেজ পোস্ট অ্যাঙ্গেজমেন্টঃ লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার বৃদ্ধি করার জন্য।
পেজ লাইকঃ শুধুমাত্র লাইকের সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য।
ক্লিক টু ওয়েবসাইটঃ ফেসবুক পেইজ কিংবা প্রোফাইল থেকে ওয়েবসাইটে ভিজিটর বৃদ্ধি করার জন্য।
ওয়েবসাইট কনভার্সনঃ ওয়েবসাইটের নির্দিষ্ট কিছু পেইজে ক্লিকসংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য।
অ্যাপ ইন্সটলঃ ফেসবুক পেইজ কিংবা প্রোফাইল থেকে অ্যাপ ডাউনলোডের সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য।
অ্যাপ অ্যাঙ্গেজমেন্টঃ অ্যাপ্লিকেশনের নির্দিষ্ট কিছু বাটনে ক্লিক বৃদ্ধি করার জন্য।
ইভেন্ট রেসপন্সঃ বিশেষ কোনো ইভেন্টের অ্যাঙ্গেজমেন্ট বৃদ্ধি করার জন্য।
অফার ক্লেইমঃ ফেসবুক পেইজ কিংবা প্রোফাইল থেকে অফারে ক্লিকসংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য।
নতুন কিংবা পুরোনো যেকোনো ব্যবসার জন্যই ফেসবুক মার্কেটিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অ্যাডভার্টাইজিং মেথড। ফেসবুক অ্যাড সম্পর্কে না জেনে কিংবা কখন অ্যাড ব্যবহার করা প্রয়োজন, সে বিষয়ে সঠিক জ্ঞান না থাকলে ফেসবুক অ্যাড চালু করা উচিত নয়। এতে পণ্য বা সেবার প্রচার তো হয়ই না, বরঞ্চ এর কোয়ালিটি নষ্ট হতে পারে।
The post appeared first on Technology Bangla News - Photos, Videos, Reviews, Downloads and Update:.
অরিজিনাল পোস্ট
পোস্টটি Techzoom থেকে নেওয়া