বাংলাদেশি ছবিতে কাজ করবেন নাফিস

নিজস্ব প্রতিবেদক, টেকজুম ডটটিভি// ইন্টাররেস্টিং কোনো অফার পেলে তিনি বাংলাদেশি ছবিতে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন দুইবার অস্কারজয়ী বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নাফিস বিন জাফর ।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৬ ডিসেম্বর থেকে অনুষ্ঠিত ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড এর দ্বিতীয় দিনে হল অব ফেমে অনুষ্ঠিত মিট উইথ নাফিস শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে অস্কার জয়ী এই সফটওয়্যার প্রকৌশলী এবং অ্যানিমেশন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এক লাখে কেউ সফলতার শীর্ষে উঠতে পারে না। ধাপে ধাপে তাকে এগুতো হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে নাফিস বলেন, ‘আজ আমি আমার ফিল্ম কেরিয়ার নিয়ে কথা বলবো। হয়তো আমার গল্প শুনে কেউ কেউ উদ্বুদ্ধ হতে পারেন। আমার জার্নিটা মসৃণ ছিল না। আমি কাজ করতে করতে শিখেছি। শুরুতে আমি একা ছিলাম। আর এখন আমার সঙ্গে ৫০০ লোক কাজ করছে। সিনেমা তৈরি একার কাজ নয়। এটি একটি টিম ওয়ার্ক।

নাফিস বলেন, অ্যানিমেশন ফিল্ম নিয়ে কাজ করতে হলে প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ জানতে হয়। যেহেতু আমি একজন সফটওয়্যার প্রকৌশলী তাই আমার এ সম্পর্কে ধারণা ছিল। বাকিটা অামি কাজ করতে করতে শিখেছি। শুরুতে যে কাজ করতে আমার এক মাস লেখেছি, পরবর্তীতে সেই একই কাজ আমার করতে কয়েক মূহূর্ত লেগেছে। তাই আমি তরুণদের বলবো আপনারা হাল ছাড়বেন না। কাজটাকে রপ্ত করতে পারলে আপনি এর ভেতর আনন্দ খুঁজে পাবেন। কাজের মধ্যে আনন্দ না থাকলে আপনি কোনোদিনও সেই কাজে সফল হতে পারবেন না।

অস্কার জয়ী এই বাঙালি বলেন, ‘আমি ছিলাম একা। শুরুও করেছিলাম একা। আর এখন আমি টিমকে নেতৃত্ব দেই। সবাইকে ম্যানেজ করাই আমার কাজ। আমার স্বপ্ন আমি অন্যদের সহযোগিতায় পূরণ করছি। যার ফলশ্রুতিতে আমি দুবার অস্কার পেয়েছি।

অ্যানিমেন ফিল্মের কাজের ধরণ উল্লেখ করে নাফিস বলেন, অ্যানিমেশন ফিল্মে বিজ্ঞানের সবোত্তম ব্যবহার হয়। এখানে যেমন গ্রাফিক্স লাগে তেমনি লাগে গনিত, জ্যামিতি, ভিজুয়াল ইফেক্টস। এটা আসলে একটা গল্প বলার মত। দৃশ্যকল্প গুলোকে সফটওয়্যারে সাজাতে হয়। এজন্য স্টোরি টেলিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তরুণদের উদ্দেশ্য করে নাফিস বলেন, আপনার যদি এই সেক্টরে কাজ করতে চান তবে থিয়েটারে কাজ করুন। নাটকে কাজ করুন। প্রথমে ছোট গল্প তৈরি করুন। শট ফিল্ম বানান। প্রয়োজনে টিভিতে শিক্ষানবীস হিসেবে কাজ করেন। এসব কাজ করতে করতে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার কোন কাজটা ভালো লাগে। একটা নাটক কিংবা ছবিতে শুধু ক্যারেক্টার ছাড়াও পেছনে অনেক কিছু থাকে। সেগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে হবে। না হলে ভালো ফিল্ম মেকার হওয়া যাবে না।

নাাফিস জানান তার ছবিতে হাতেখড়ি হয়েছিল ২০০০ সালে। তখন তিনি ইমেজ প্রসেসিং সফটওয়্যার নিয়ে কাজ শুরু করেন। এরপর নানা ধরণের ইমেজ প্রসেসিং সফটওয়্যার ও ভিজুয়াল ইফেক্টস শিখেছেন। এ নিয়ে তার ভাষ্য, ‘একটা ছবিতে নানা বিষয় থাকে। এমন কিছু বিষয় থাকে যা তৈরি করতে প্রচুর অর্থ ব্য় হয়। কিন্তু এগুলো যদি আপনি অ্যানিমেশনের সাহায্যে করেন তবে সময়ও যেমন বাঁচতে তেমনি খরচটাও কমে যাবে। বাস্তব দৃশ্যকে ছবিতে অ্যানেশন ও ইফেক্টস দিয়ে বাস্তবের কাছাকাছ নিয়ে আসা যায়।

নাফিস তার সফলতার গল্প তুলে ধরে বলেন.‘ আপনারা এখন একজন সফল অ্যানিমেটর কিংবা অস্কার জয়ীকে দেখতে পাচ্ছেন। কিন্তু এর পেছনের শ্রম ও মেধার সমন্বয় করতে হয়েছে। যা সফলতার মূল চাবিকাঠি।
নাফিস তরুণ ফিল্ম মেকারদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি যদি ফিল্ম মেকার হতে চান তবে অাপনার স্বপ্ন থাকতে হবে। সেই সঙ্গে কাজটিকে ভালোবাসতে হবে। প্রথমে ছোট ছোট করুন। যা আপনাকে বড় কাজে উৎসাহিত করবে। এখানে সরকারও আপনাকে অনুদান দিতে পারে। যদি আপনার আইডিয়া ক্রিয়েটিভ হয়।

নাফিস জানান, তার পরিচালিত একটি সংগঠন ‘সি গ্রাফ’। এটি আজ থেকে বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করবে। এই সংগঠনটি তরুণদের অ্যানিমেশনের উপর ধারণা দেবে। পাশাপাশি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা দেবে। এর সঙ্গে যু্ক্ত থাকলে নাফিস বিন জাফরের সহচর্যও মিলবে।

নাফিস প্রথম বাংলাদেশী ব্যক্তি হিসেবে ২০০৭ সালে অস্কার পুরষ্কার জেতেন। হলিউডের পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ান: অ্যাট ওয়ার্ল্ড’স এন্ড চলচ্চিত্রেফ্লুইড অ্যানিমেশনের জন্য সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল বিভাগে ডিজিটাল ডোমেইন নামে ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস ডেভেলপার কোম্পানির হয়ে দুই সহকর্মী ডাগ রোবেল ও রিয়ো সাকাগুচি সাথে নাফিস এ পুরস্কার জেতেন।
এর পর ‘২০১২’ মুভিতে প্রথম ড্রপ ড্রেসট্রাকশন টুলকিট ব্যবহারের জন্য অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড অব সায়েন্স ২০১৪ পুরস্কার পান তিনি। ওই ড্রপ ড্রেসট্রাকশন টুলকিটটি প্রথম ব্যবহার হয় ‘২০১২’ ছবিতে। এরপর ট্রান্সফরমারের প্রতিটি সিরিজ ও ২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘অগম্যান্ট’সহ ২০ টিরও বেশি ছবিতে এটি ব্যবহার করা হয়েছে।
নাফিসের জন্ম ১৯৭৮ সালের ৮ অক্টোবর, ঢাকায়। তার বাবার নাম জাফর বিন বাশার এবং মায়ের নাম নাফিসা জাফর। [৩] তিনি সম্পর্কে বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ও পাপেট নির্মাতা মুস্তফা মনোয়ারের ভাতিজা এবং প্রয়াত কবি ও লেখক গোলাম মোস্তফার নাতি।


অরিজিনাল পোস্ট
পোস্টটি Techzoom থেকে নেওয়া
Thank you for reading this article on বাংলাদেশি ছবিতে কাজ করবেন নাফিস on the Apps For Life bd blog if you want to spread this article please include links as Source, and if this article useful please bookmark this page in your web browser, with How to press Ctrl + D on your keyboard button.

Latest articles: