প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সাথে সাথে দৈনন্দিন জীবনে নানা ইলেকট্রনিক্স পণ্য হচ্ছে আমাদের নিত্য-ব্যবহারের সঙ্গী। টিভি, ফ্রিজ, ওভেন, কম্পিউটার, মোবাইল ফোনের মত পণ্যগুলো জীবনকে যতটা সহজ করছে তেমনি এগুলো ব্যবহারের কয়েক বছর পর কর্মক্ষমতা শেষ হলে ফেলে দেওয়া হচ্ছে যেখানে সেখানে। দেশে গড়ে ওঠেনি মানব স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর এসব বর্জ্যরে সঠিক কালেকশন সিস্টেম এবং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। ফলে পরিবেশ দুষণের চরম বিপর্যয়ের মুখে। একই সঙ্গে বাড়ছে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকিও। দেশে প্রতিবছর ২০ মিলিয়ন মেট্রিক টন ইলেকট্রনিক্স ওয়েস্ট বা ই-বর্জ্য তৈরি হচ্ছে।
ক্রমাগতভাবে ই-বর্জ্য সৃষ্টির হার বেড়ে চলার কারণে আমরা সবাই বাড়ির ডাস্টবিনে, রাস্তাঘাটে, নদী-খাল-ড্রেনে বা খোলা জায়গায় ই-বর্জ্য ফেলছি। দেশে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোন আইন না থাকায়, ই-বর্জ্য যত্রতত্র ফেলার ক্ষতি সম্পর্কে জন সচেনতার অভাবের কারণে ও ই-বর্জ্য সম্পর্কিত দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের অতি লোভের কারণে মানুষ ও পরিবেশ আজ মারাত্তক ঝুঁকির মুখে।
‘এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’ নামে একটি সংস্থা বলছে চট্টগ্রামের জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প পুরানো জাহাজ যেগুলো ভাঙ্গার জন্য আনা হয় সেগুলোর মধ্যেও সেসব দেশের ইলেকট্রনিক্স পণ্য বা ই-ওয়েস্ট থাকে। এসব বিষাক্ত উপাদান মাটিতে এবং পানিতে যাচ্ছে। চক্রাকারে তা আবার মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে”। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ১ কোটি ১০ লাখ টনে দাঁড়ায়। এর মধ্যে শুধু মুঠোফোন থেকেই তৈরি হয়েছে ৫১ হাজার ৫০০ টন বর্জ্য। আর টেলিভিশন এবং কম্পিউটার বর্জ্য তৈরি হয়েছে যথাক্রমে ৮ লাখ ৬০ হাজার ও ৩৪ হাজার ৪০০ টন। এর বাইরে সিএফএল বাতি, মার্কারি বাতি, থার্মোমিটারসহ নানা প্রকারের চিকিৎসা ও গৃহস্থালি যন্ত্র থেকে তৈরি হওয়া বর্জ্যের পরিমাণ ২ লাখ ১০ হাজার ৩৩৬ মেট্রিকটন।
বাংলাদেশে ই-ওয়েস্ট বা ই বর্জ্য তৈরির অন্যতম পণ্যের মধ্যে রয়েছে কম্পিউটার ও ল্যাপটপ। এই পণ্যের বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান গুলো পুরানো কম্পিউটার ফেরত নেওয়া বা রি-সাইকেল করার জন্য কোন নিয়মনীতির বাধ্যবাধকতায় কি পরেন? একবছরের মধ্যে কোন সমস্যা হলে ঐ প্রতিষ্ঠান মেরামতের কাজ করে দেয়। কিন্তু কয়েক বছর পর ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পরলে সেগুলো রি-সাইকেল বা পুনর্ব্যবহার উপযোগী করা তোলা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পরে না প্রতিষ্ঠানগুলোর।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ই-বর্জ্যের বিষয়টি এখন বাংলাদেশের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। এর স্বাস্থ্যঝুঁকিও মারাত্মক। এ ক্ষেত্রে এখনই ব্যবস্থা না নিলে এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে।
২০১২ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত সিরিয়াস মার্কেটিং অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চ লিমিটেডের ‘ন্যাশনাল মিডিয়া সার্ভে’ বলছে, সে সময় দেশে টিভি সেটের সংখ্যা ছিল দুই কোটির কাছাকাছি। বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল মার্চেন্ডাইজ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, দেশের মানুষ প্রতিবছর গড়ে ৩০ হাজার কোটি টাকার বৈদ্যুতিক পণ্য ব্যবহার করে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হিসাবে, বর্তমানে দেশে প্রায় ১৩ কোটি মুঠোফোনের সংযোগ চালু আছে। বাংলাদেশ মোবাইল ফোন বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের মতে, গত এক বছরে বৈধ পথে আমদানি করা মুঠোফোনের সংখ্যা ২ কোটি ৬০ লাখ। আর অবৈধ পথে এসেছে ৫০ লাখের বেশি।
পদ্ধতিগত সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আইনি ভিত্তিও অনেকাংশে দুর্বল। আমাদের দেশে এই সম্পর্কিত কোনো আইন কিংবা বিধিমালাও নেই। তবে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ২০১২ সালে ডিসপোজাল ম্যানেজমেন্ট রুল নামে নতুন করে যে খসড়া বিধিমালাটি তৈরি করেছে, তা এখনও আইনে পরিণত হয়নি।
টেকজুমটিভি/ এমআইজে
অরিজিনাল পোস্ট
পোস্টটি Techzoom থেকে নেওয়া