চাকরি কি সোনার হরিণ: মোস্তাফা জব্বার

মোস্তাফা জব্বার: সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবা খাতের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর সভাপতি মোস্তাফা জব্বার সম্প্রতি যশোর হাইটেক পার্কের চাকরি মেলায় চাকরী প্রার্থীদের নিযে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। যেখানে তিনি বলেছেন‘ চাকরি কি সোনার হরিণ’।

তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো;

৫ অক্টোবর ১৭ যশোরের শংকরপুরে স্থাপিত দেশের প্রথম ও একমাত্র পূর্ণাঙ্গ এসটিপি শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোরজি পার্কে যা ঘটেছে তার সকল স্তরের ছবিই আমি তুলেছি বা সংগ্রহ করেছি। তবে সবার ওপরে আছে সেদিন জমা দেয়া চাকুরী প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত-এর স্তূপ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, হাইটেক পার্কের সভা, সেমিনার সবই আমি ছবিতে ওঠে এসেছে ফেসবুক ভরে গেছে এসব ছবিতে। অনেক মিডিয়ায় খবরও হয়েছে।। আজ দেখলাম বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর এই বিষয়ে ছোট অথচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। ফাহিমের স্ট্যাটাসটা আামকে ট্যাগ করা। তাই সেটি সরাসরি কেউ পড়তে পারেন। আমার এই স্ট্যাটাসের পাঠকদের জন্য সেটি আমি উদ্ধৃত করছি।

ফাহিম লিখেছে:“ ফেসবুকে যশোরে অনুষ্ঠিত চাকরি মেলার ছবি দেখছিলামI দেশে শিক্ষিত বেকার সমস্যা যে কি ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে, এটির একটি খন্ড চিত্র এটিI গত কয়েক বছর ধরে বলে আসছি আমরা আসলে ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ (Demographic Dividend) সুবিধা নেবার মতো অবস্থা তৈরী করতে পারছি না – আসলে আমরা ধাবিত হচ্ছি ভয়াবহ এক ‘ডেমোগ্রাফিক ডিসাসটার’ (Demographic Disastor)- এর দিকেI

হতাশাগ্রস্ত লক্ষ্যহীন কোটি কোটি কর্মহীন তরুণ (লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত ‘স্কিলহীন’ বেকার) আমাদের এই সমাজের সবকিছুকে, স্থিতিশীলতাকে, যা কিছু অগ্রযাত্রাকে লণ্ডভণ্ড করে দিতে পারে যেকোনো সময়I এক ভয়ঙ্কর টাইম বোমা হাতে নিয়ে বসে আছি আমরা সবাই।” ফাহিমের স্ট্যাটাসে আমি নিচের মন্তব্যটা করেছি। . .

“৫ অক্টোবর ১৭ আমি যশোরে ছিলাম। নিজের চোখে দেখেছি। হাজার হাজার তরুণ-তরুণী কাগজের খয়েরি খাম হাতে পুলিশের বকা-লাঠি-গুতা খেয়েও দুপুর অবধি কেবল সিভিটা জমা দেবার চেষ্টা করেছে। সেমিনারে মেঝেতে বসে আমাদের বাণী শুনেছে। অনেকেই প্রশ্নও করেছে। এমন অবস্থা এর আগে আমি আর কখনও দেখিনি। তখনই মনে প্রশ্ন জেগেছে ওদেরকে দিয়ে আমরা কি করবো। যাতে ওদের মন না ভাঙে সেজন্য বলে আসছি দেশের মানচিত্রটা বুকের মাঝে রাখ, সৎ হও, আন্তরিক হও এবং দক্ষতা অর্জন করো। ভেবনা আইটি মানেই কেবল কম্পিউটার বিজ্ঞানের দক্ষতা, কোড লেখা বা প্রোগ্রামিং করা। আইটির সাথে ৪৮০০ রকমের পেশার সম্পর্ক আছে। তার জন্য দক্ষতা প্রয়োজন। কিন্তু সমস্যাটা অন্যরকম। ওরাতো শিক্ষার্থী নয় যে ওদের পাঠক্রম, পাঠ্য বই, পাঠ্যবিষয়, পাঠদান ইত্যাদি বদলে নতুন দক্ষতা দেয়া যাবে। ওদের একমাত্র ভরসা প্রশিক্ষণ। আমরাতো প্রশিক্ষন দেবার প্রাণান্ত চেষ্টা করেই যাচ্ছি। কিন্তু তার ফলতো ভালোনা। বিশ্বব্যাঙ্কের টাকা, এডিবির ফান্ড বা সরকারের তহবিল কোনটারইতো ফলাফল সন্তোষজনক নয়।”

বস্তুত ফাহিম যে ডেমোগ্রাফিক ডিজাস্টারের কথা বলেছে সেটি কারও মাথায় ঢুকছে বলে আমি মনে করছিনা। আমাদের শিক্ষাবিদ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সরকারের নীতি নির্ধারক বা রাজনীতিবিদদের কেউ্ এই ভয়ংকর মানব বোমাটির কথা ভাবছেইনা। লক্ষ লক্ষ বেকার থেকে ধীরে ধীরে যখন আমরা কোটি কোটি বেকারের সংখ্যায় ওঠছি তখন এই বেকাররাই চাকরির জন্য এতো বেপরোয়া হয়ে ওঠছে যে তারা যা কিছু করে বসতে পারে। এমনও যদি দেখেন যে কোন তরুণী তার নিজের সবই কেবল একটি চাকরি পাবার জন্য দিতে চায় তবে অবাক হবেন না। আবার যদি দেখেন যে কোন বেকার চাকরি না পেয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে তাহলেও অবাক হবেন না। যশোরের ৫ অক্টোবরের চিত্রটি সকলের চোখে আঙল দিয়ে এক চরম নির্মম বাস্তবতা তুলে ধরেছে। অন্যদিকে বেকারের এই স্রোত ঠেকাতে এখনই ঝাপিয়ে পড়া উচিত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার দিকে। এই বেকার তৈরির কারখানাটি যদি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে অব্যাহত থাকে তবে আগামী দিনগুলোতে বেকারের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়বে। তখন কি কাজে লাগবে আমার মানবসম্পদ?

যে কথাটি সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে বলা দরকার সেটি হলো এখন আমরা যদি এটি ভাবি যে ছেলেমেয়েদেরকে কেবল কারিগরি বা বৃত্তিমূলক শিক্ষা দেব বা এদেরকে কম্পিউটার শেখাব তবে হিসাবটাতে বড় ভুল হবে। এখন সময়টা প্রচলিত কম্পিউটার যুগের নয়।

এমনকি কেবল ইন্টারনেটের যুগও নয়। এখন যাদেরকে আমরা তৈরি করতে চাই তারা হোক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন প্রযুক্তির বিশেষজ্ঞ। সৃজনশীল মানবগোষ্ঠী যারা উদ্ভাবন ও গবেষণায় মনযোগী হবে তেমন প্রজন্ম গড়ে তুলেই ভযংকর এই সংকট থেকে আমরা পরিত্রাণ পেতে পারি। এই অবস্থাটি জানি বলেই সেই ৮৭ সাল থেকেই আমি শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের কথা বলে আসছি। এটাও বলে আসছি যে শিক্ষার পরিবর্তনটা ওপরে যেভাবেই করুন শিশু শ্রেণি থেকেই বদলাতে হবে। এজন্য ডিজিটাল শিক্ষার শেকড়টা আমি শিশুশ্রেণি থেকেই শুরু করেছি। এই ভাবনা থেকেই আমি শিশুদেরকে প্রোগ্রামার বানানোর লড়াই শুরু করেছি। আসুন আমরা আমাদের শিশুদের জন্য নিজেদের ভবিষ্যৎটাকে উৎসর্গ করি।

টেকজুম ডটটিভি/৭অক্টোবর/এসআর


অরিজিনাল পোস্ট
পোস্টটি Techzoom থেকে নেওয়া
Thank you for reading this article on চাকরি কি সোনার হরিণ: মোস্তাফা জব্বার on the Apps For Life bd blog if you want to spread this article please include links as Source, and if this article useful please bookmark this page in your web browser, with How to press Ctrl + D on your keyboard button.

Latest articles: