সঠিকভাবে জানুন বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা, সিলেবাস ও আবেদনের পদ্ধতি


শিক্ষকতা একটি পেশা হিসাবে যারা ক্যারিয়ার শুরু করতে চান তাদের জন্য শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে । বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন একটি স্কুল পর্যায়ে অপরটি কলেজ পর্যায়ের পরীক্ষা দিতে হয় এবং নতুন পদ্ধতিতে এই সনদ দিয়ে এনটিআরসিএ বরাবর অনলাইনে আবেদন করে মেধাতালিকার ভিত্তিতে যেকোনো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়া যাবে।

বিগত বছরের মতো এবারও প্রার্থীদের এমসিকিউ পদ্ধতিতে ১০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হবে এবং পরীক্ষার সময় থাকবে ১ ঘণ্টা। বিষয় থাকবে মোট ৪টি। বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান। প্রতিটি বিষয়ে ২৫টি করে মোট ১০০টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন থাকবে। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য শূন্য দশমিক ৫০ নম্বর কর্তন করা হবে এবং এরপর প্রার্থীদের ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষার পাস নম্বর হচ্ছে ৪০। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় যাঁরা উত্তীর্ণ হবে, শুধু তাঁরাই লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের এসএমএসের মাধ্যমে মৌখিক পরীক্ষার তারিখ ও সময় জানিয়ে দিবে কর্তপক্ষ। তাই আপনিও সঠিক প্রস্তুতি নিয়ে পেতে পারেন শিক্ষক নিবন্ধনের সনদ।
পরীক্ষার নিয়ম বা পদ্ধতিঃ

প্রথমে ১০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দিতে হবে। পরীক্ষার ধরন হবে এমসিকিউ বা বহু নির্বাচনী পদ্ধতিতে, সময় ১ ঘণ্টা। বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞানের প্রত্যেক অংশ থেকে ২৫টি করে প্রশ্ন থাকবে। প্রতিটি সঠিক উত্তরের জন্য ১ নম্বর, প্রত্যেক ভুল উত্তরের জন্য কাটা যাবে ০.৫০ নম্বর। পাস করতে হলে কমপক্ষে ৪০ নম্বর পেতে হবে।

প্রিলিমিনারি পরীক্ষা বিষয় ও নম্বর বন্টনঃ

০১. বাংলা-২৫

০২. ইংরেজী-২৫

০৩. সাধারণ গণিত-২৫

০৪. সাধারণ জ্ঞান-২৫

মোট= ১০০ নম্বর


বাংলা

স্কুল ও স্কুল-২ পর্যায়ে বাংলা অংশে ভালো করতে হলে ব্যাকরণে জোর দিতে হবে বলে জানান মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক সানজিদা খাতুন। তিনি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় স্কুল ও কলেজ উভয় পর্যায়েই উত্তীর্ণ হন। তিনি বলেন, ব্যাকরণের প্রায় প্রতিটি অধ্যায় থেকে এক থেকে দুটি প্রশ্ন আসে। এসব অধ্যায়ের মধ্যে ভাষারীতি ও বিরাম চিহ্নের ব্যবহার, বাগধারা ও বাগবিধি, ভুল সংশোধন বা শুদ্ধকরণ, অনুবাদ, সন্ধি বিচ্ছেদ, কারক, বিভক্তি, সমাস ও প্রত্যয়, সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দ, বাক্য সংকোচন, লিঙ্গ পরিবর্তন অধ্যায়গুলো ভালোভাবে পড়লে প্রশ্ন পাওয়া যাবে। আর কলেজ পর্যায়ের জন্য পড়তে হবে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যবইগুলো। এসব বইয়ের গদ্য ও পদ্যের লেখক পরিচিতি সম্পর্কে জানা থাকলে ভালো করা যাবে। এ ছাড়া বিগত বছরগুলোর শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার প্রশ্নগুলোর সমাধান করলেও বেশ কাজে দেবে।

গণিত

প্রভাষক সানজিদা খাতুনের মতে, দশম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় কলেজ পর্যায়ে উত্তীর্ণ সোহরাব হাসান জানান, অনেকেই গণিতে খারাপ করে। গণিতে ভালো করতে হলে সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির বইগুলো বারবার চর্চা করতে হবে। পাটিগণিত থেকে লসাগু, গসাগু, ঐকিক নিয়ম, শতকরা, সুদকষা, লাভ-ক্ষতি, অনুপাত-সমানুপাত—এসব অধ্যায় ভালো করে চর্চা করলে প্রশ্ন পাওয়া যাবে। আর বীজগণিতের জন্য করতে হবে উৎপাদক, বর্গ ও ঘনসংবলিত সূত্রগুলো ও প্রয়োগ, গসাগু, সূচক, লগারিদম—এসব অধ্যায় থেকে প্রতিবছরই প্রশ্ন থাকে। জ্যামিতির জন্য রেখা, কোণ, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, ক্ষেত্রফল ও বৃত্ত অধ্যায়গুলো আয়ত্তে রাখা দরকার। বিগত বছরগুলোর বিসিএস প্রশ্ন ও শিক্ষক নিবন্ধন প্রশ্নগুলো বারবার চর্চা করলেও ভালো করা যাবে। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য শূন্য দশমিক ৫০ নম্বর কাটা হয়। তাই প্রতিটি উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে।

ইংরেজি

ফেরদৌসি সুমি, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজের ইংরেজির সহকারি শিক্ষক। ৩য় নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ তিনি। তাঁর মতে, ইংরেজি বিষয়ে ভালো করতে হলে বেশি করে পড়তে হবে গ্রামারের খুঁটিনাটি। এ অংশে ভালো করতে হলে গ্রামার অংশকে গুরুত্ব দিতে হবে। এই গ্রামার অংশ থেকেই স্কুল ও কলেজ উভয় পর্যায়েই প্রশ্ন আসে। Completing Sentences, Translation from Bengali to English, Change of parts of speech, Right forms of verb, Fill in the blanks with appropriate word, Transformation of sentences, Synonyms and Antonyms, Idioms and Phrases, Article এই অধ্যায়গুলো মনোযোগসহকারে পড়লে প্রশ্ন পাওয়া যাবে। এসব অধ্যায়ের উপাদানগুলো বারবার চর্চা করলে ভালো করা যাবে।

সাধারণ জ্ঞান

অষ্টম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করেছেন মো. শহিদুর রহমান। সাধারণ জ্ঞানের প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এই বিষয়ে ২৫টি প্রশ্ন থাকবে। এ অংশে ভালো করতে হলে প্রয়োজন নিয়মিত পত্রিকা পড়া, দেশি-বিদেশি সমসাময়িক খবরগুলো নিজের আয়ত্তে করে নেওয়া। বিজ্ঞান, তথ্য ও প্রযুক্তি, পরিবেশ এবং রোগব্যাধি সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। বাংলাদেশ অংশে বাংলাদেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, জলবায়ু, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, বিভিন্ন জেলার আয়তন, অর্থনীতি ইত্যাদি সম্পর্কে অবগত থাকা দরকার। আর আন্তর্জাতিক অংশের জন্য বিভিন্ন দেশের মুদ্রা, দিবস, পুরস্কার ও সম্মাননা, সাম্প্রতিক ঘটনা—এসব থেকে দু-চারটি প্রশ্ন পাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া বাজারে সাধারণ জ্ঞানের বিভিন্ন প্রকাশনীর বইগুলো পড়লেও ভালো করা যাবে।

লিখিত পরীক্ষা

প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ঐচ্ছিক বিষয়ের ওপর ১০০ নম্বরের ৩ ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। লিখিত পরীক্ষার জন্য এনটিআরসিএ কর্তৃক প্রদত্ত সিলেবাস রয়েছে। স্কুল পর্যায়ের জন্য নবম-দশম শ্রেণির বইগুলো পড়তে হবে এবং কলেজ পর্যায়ের লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে হলে প্রার্থীর অনার্স পর্যায়ের বইগুলো পড়লেই চলবে। এ ছাড়া বিগত বছরের প্রশ্নগুলো দেখলেও ধারণা পাওয়া যাবে। প্রতিটি প্রশ্নেরই বিকল্প প্রশ্ন থাকবে। তাই একটি না পারলে অন্যটি উত্তর দেওয়া যাবে।

আবেদনের পদ্ধতিঃ


  1. আবেদন করার জন্য ntrca.teletalk.com.bd ওয়েবসাইট ওপেন করতে হবে।
  2. প্রথমে পদ নির্বাচন করতে হবে।
  3. আবেদনের সময় লিখিত পরীক্ষার ঐচ্ছিক বিষয় ও পরীক্ষাকেন্দ্র নির্বাচন করতে হবে ।
  4. তবে যেহেতু উপজেলা ভিত্তিক মেধা তালিকা প্রকাশ করা হবে সেহেতু কোন অবস্থায় স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করা যাবে না।
  5. ৩০০ বাই ৩০০ পিক্সেল আকারের রঙিন ছবি এবং ৩০০ বাই ৮০ পিক্সেল আকারের স্ক্যান করা স্বাক্ষর আপলোড করতে হবে ।
  6. অনলাইন আবেদন ফরম নির্ভুলভাবে পূরণ করতে হবে।
  7. আবেদনপত্রে সাবমিটকৃত মোবাইল নম্বরটিতে পরবর্তীতে এসএমএস প্রেরণ করা হবে। এজন্য অবশ্যই মোবাইল নম্বরটি স্থায়ী ও ব্যবহার যোগ্য হতে হবে।
  8. আবেদনপত্র সাবমিটের পর দেওয়া হবে ইউজার আইডিসহ অ্যাপ্লিকেন্টস কপি। অ্যাপ্লিকেন্টস কপি ডাউনলোড ও করতে হবে।
  9. অ্যাপ্লিকেন্টস কপি প্রিন্ট করে সংরক্ষণ করতে হবে। নিয়োগের সময় প্রয়োজন হতে পারে।


আবেদন ফি পরিশোধঃ

আবেদন করার পর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে টেলিটক প্রিপেইড সিমের মাধ্যমে এসএমএস-এ পরীক্ষা ফি বাবদ ৩৫০ টাকা জমা দিতে হবে। আবেদনপত্র ডাউনলোড করার পর উক্ত আবেদন ফরমে প্রাপ্ত ইউজার আইডি ব্যবহার করে নিন্মের দুটি পদ্ধতিতে এসএমএস করতে হবে।

১ম এসএমএসঃ NTRCA <space> user ID & send to 16222

ফিরতি এসএমএস এ PIN সহ ফিরতি একটি এসএমএস আসবে।

২য় এসএমএসঃ NTRCA <space> Yes <space> PIN & send 16222.

মোবাইলের ব্যালেন্স থেকে ৩৫০ টাকা কেটে ফিরতি এসএমএসে কেটে নিবে।



এসএমএস এর মাধ্যমে মাধ্যমে ইউজার আইডি / সিরিয়াল/ পিন নম্বর পুনরদ্ধার করার পদ্ধতিঃ

ইউজার আইডি জানা থাকলেঃ

NTRCA<space>HELP<space>USER<space>USER ID & send to 16222.



পিন নম্বর জানা থাকলেঃ

NTRCA<space>HELP<space>PIN<space>PIN NO. & send to 16222.

প্রবেশপত্রঃ

  1. মোবাইলে এসএমএস-এ User ID এবং Password জানিয়ে দেওয়া হবে, পরবর্তী ধাপের জন্য এটি সংরক্ষণ করতে হবে। প্রাপ্ত User ID এবং Password ব্যবহার করে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে হবে।
  2. প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা লিখিত পরীক্ষার জন্য মোবাইলে এসএমএস পাওয়ার পর অনুরুপ ভাবে User ID এবং Password ব্যবহার করে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে হবে।
  3. লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার সময় ও স্থান এসএমএস-এর মাধ্যমে অবহিত করবে।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসমূহঃ

  1. ডাউনলোডকৃত আবেদন কপি।
  2. শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র।স্নাতক (পাস বা সম্মান) পর্যায়ের নম্বরপত্র।
  3. নাগরিকত্ব সনদ।
  4. জাতীয় পরিচয়পত্র।
  5. প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের প্রশিক্ষণ সনদ।
  6. সহকারী শিক্ষক পদে আবেদনকারীদের অনলাইনে আবেদনের সময় উল্লিখিত ঐচ্ছিক বিষয়ের সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে স্নাতক পর্যায়ের প্রবেশপত্র।
Thank you for reading this article on সঠিকভাবে জানুন বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা, সিলেবাস ও আবেদনের পদ্ধতি on the Apps For Life bd blog if you want to spread this article please include links as Source, and if this article useful please bookmark this page in your web browser, with How to press Ctrl + D on your keyboard button.

Latest articles: